৭ অক্টোবর হামাস যোদ্ধারা ইসরায়েলে একটি সংগীত উৎসবে যে আকস্মিক হামলা চালিয়েছিলেন, তা সম্ভবত তাদের পূর্বপরিকল্পিত ছিল না। সেখানে গিয়ে লোকসমাগম দেখে হামলার সিদ্ধান্ত নেন তারা।

পুলিশ ও নিরাপত্তা সূত্রের বরাতে ইসরায়েলি গণমাধ্যম এ খবর দিয়েছে।
চলতি সপ্তাহে ওই হামলার একটি পুলিশ প্রতিবেদন ইসরায়েলের চ্যানেল ১২ এর হাতে আসে। প্রতিবেদন অনুযায়ী ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা কিবুৎজ রে’ইমের পাশাপাশি সীমান্তের কাছের গ্রামগুলোতে হামলা চালাতে চেয়েছিলেন। ড্রোন দিয়ে এবং আকাশ থেকে সংগীত উৎসবটি তাদের নজরে আসে। যোদ্ধারা প্যারাস্যুটে করে ইসরায়েলে প্রবেশ করেছিলেন।

শনিবারের ওই উৎসবে চার হাজারের বেশি লোক উপস্থিত ছিলেন। ইসরায়েলি নিরাপত্তা বলয় ভেঙে হামাস ইসরায়েলে ঢুকে পড়েন। ইসরায়েলের কাছে রয়েছে র‍্যাডার সিস্টেমসহ আন্ডারগ্রাউন্ড সেন্সর। এসব থাকার পরও হামাস যোদ্ধারা দক্ষিণ ইসরায়েলে সামরিক চৌকিসহ কয়েকটি গ্রামে হামলা চালায়। এ হামলায় এক হাজার ২০০ জন নিহত হওয়ার খবর জানিয়েছে ইসরায়েল। তবে আগে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ এক হাজার ৪০০ জনের নিহত হওয়ার খবর জানিয়েছিল।

চলতি শনিবার ইসরায়েলি সংবাদপত্র হারেৎজ প্রতিবেদনে বলছে, ধরা পড়া হামাস সদস্যদের পুলিশি তদন্ত ও জিজ্ঞাসাবাদের ওপর ভিত্তি করে তৈরি মূল্যায়নে দেখা গেছে, সশস্ত্র গোষ্ঠীটির ওই অনুষ্ঠানে হামলার কোনো পরিকল্পনা ছিল না।

নিহত হামাস সদস্যদের পাশে পাওয়া হামলার লক্ষ্যবস্তুর মানচিত্র পাওয়া যায়। এসব লক্ষ্যবস্তুর মধ্যে সংগীত উৎসবের স্থানটি ছিল না। আরেকটি অনুসন্ধান অনুযায়ী, হামাস যোদ্ধারা সীমান্তের দিক থেকে উত্সবের কাছে যাননি। কাছাকাছি একটি হাইওয়ে থেকে তারা সেখানে পৌঁছান।

এ ছাড়া অনুষ্ঠানটি মূলত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবারে হওয়ার জন্য নির্ধারিত ছিল। শনিবার যুক্ত হয়েছিল ওই সপ্তাহের মঙ্গলবার। প্রতিবেদনে আরও দেখা গেছে যে, হামাসের উপস্থিতি এবং হামলা শুরু হওয়ার সময় বেশিরভাগ দর্শক অনুষ্ঠানটি ছেড়ে চলে যেতে সক্ষম হয়েছিলেন।

জ্যেষ্ঠ এক পুলিশ সূত্রকে উদ্ধৃত করে করে হারেৎজ বলছে, রকেট হামলার চার মিনিট পর গানের আয়োজনটি ছত্রভঙ্গ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে অধিকাংশই পালিয়ে যেতে সক্ষম হন।

পুলিশের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ইসরায়েলি সামরিক হেলিকপ্টার থেকে হামলাকারীদের ওপর গুলি চালানো হয়। তাদের সঙ্গে উৎসবে অংশ নেওয়া লোকেরাও ছিলেন। এর বেশি কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি।

বেনামি এক পুলিশ কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে সংবাদপত্রটি বলছে, তদন্তে দেখা গেছে, ইসরায়েলি সামরিক হেলিকপ্টার রামাত ডেভিড ঘাঁটি থেকে ঘটনাস্থলে আসে এবং অস্ত্রধারীদের ওপর গুলি চালায়। দৃশ্যত সেখানে অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া লোকেরাও ছিলেন।

পুলিশের তদন্তে নিহতের সংখ্যা ২৭০ থেকে বেড়ে ৩৬৪ হয়েছে। এর মধ্যে ১৭ পুলিশ কর্মকর্তা রয়েছেন। উৎসবে অংশ নেওয়া লোকেদের মধ্য থেকে ৪০ জন জিম্মি হন।

হামাসের হামলার জবাবে ইসরায়েল গাজায় বিমান হামলা শুরু করে। এ পর্যন্ত ১২ হাজার ফিলিস্তিনির বেশি ফিলিস্তিনির প্রাণ গেছে। এর মধ্যে শিশুই পাঁচ হাজার। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ এমন তথ্য জানিয়েছে।